প্রকাশিত: Fri, Dec 8, 2023 5:38 PM
আপডেট: Sat, Dec 6, 2025 4:20 PM

মোরেলগঞ্জে খেজুর রস সংগ্রহে গাছীরা ব্যাস্ত সময় পার করছে

শাহজাহান আলী , মোরেলগঞ্জ,বাগেরহাট: [২] বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহে ব্যাস্ত সময় পার কারছে গাছীরা। দম ফেলার সময় নেই। অতিরিক্ত লবনাক্ততা ও আবহাওয়ার বিরুপ প্রভাবের কারনে দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমে গেলেও শীত মৌসুমে এ পেশায় নিয়োজিত গাছীদের চাহিদা বেড়ে যায়। রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরী করে বাজারে বিক্রি করে সংসার চলে অনেকেরই। স্থানীয়দের অভিমত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সরকারী উদ্যোগে  খেজুর গাছ রোপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।  

[৩] সরেজমিনে খোজ নিয়ে জানা যায় উপকূলীয় মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নসহ পৌরসভার প্রত্যন্ত গ্রাম ও গঞ্জে এক সময় অযত্নে অবহেলায় রাস্তার পাশে, জমির সীমানায় , বাগানের আনাচে কানাচে বেড়ে ওঠা হাজার হাজার  খেজুর গাছ এখন আর দেখা যাচ্ছে না। জলবায়রু পরিবর্তন ও বৈরী আবহাওয়ার কারনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এ খেজুর গাছ। 

[৪] অন্যদিকে ইট ভাটাগুলোতে জ্বালানী হিসেবে ব্যাপক পরিমানে ব্যবহার হচ্ছে খেজুর গাছ। এ খেজুর গাছের রস থেকে গুড় তৈরি করে বাঙ্গালীর ঐতিহ্য গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে পিঠা পায়েশ উৎসব হতো। অগ্রাহায়ন মাস এলে কৃষক ধান কেটে ঘরে তোলার পরে মেতে উঠতো নবান্ন উৎসবে। গ্রামীণ জনপদের প্রতিটি ঘরে ঘরে শিশু থেকে বৃদ্ধরা মেতে উঠতো আনন্দে। বসতো মেলা, পালা গানের আসর। 

[৫] একজন পেশাদার গাছী বহরবুনিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম বহরবুনিয়া গ্রামের  আউয়াল হাওলাদার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন ১৫বছর ধরে তিনি এ পেশায় নিয়োজিত। এ মৌসুমে একসময়ে যেখানে ৮’শ থেকে ১হাজার গাছ কাটতো ৩/৪ মাসের উপার্জিত অর্থ দিয়ে সারা বছর সংসার চালিয়েও লক্ষাধিক টাকা সঞ্চয় রাখতে পারতেন। এ বছরে সেখানে মাত্র ১৫০টি গাছ কাটছেন তিনি। এ গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ৩০/৪০টি খেজুর গাছ ছিলো এখন সেখানে ২/৪টি গাছ কাটতে পারছেন তিনি। গাছ কমে যাওয়ায়  রসও কমে গেছে। যদিও চাহিদা রয়েছে অনেক। উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি হয়েছে কিন্ত চাহিদা মিটাতে পারছেননা ক্রেতাদের।  এনিয়ে গালমন্দ শুনতে হচ্ছে সাধারণ মনুষের। খেজুর রসের বড় হাড়ি বিক্রি হচ্ছে। দেড়শ টাকা, ছোট হাড়ি ১শ টাকা। চৈত্র মাসের দিকে একটু চাহিদা কম থাকায় ওই সময় গুড় তৈরী করে ২’শ টাকা দরে  প্রতি কেজি গুড় বিক্রী করেন বাজারে। অনেকে আবার অগ্রিম টাকা দিয়ে যাচ্ছেন গুড় নেবার জন্য। গাছ মালিকদের অর্ধেক হারে খেজুর রস দিতে হয়। গাছ কমে যাওয়ার আগের মতো আর লাভ হচ্ছে না তার।  দুমাস পূর্ব থেকেই গাছ কাটা শুরু করছেন। আর ১৫দিন পর  রস সংগ্রহ করা যাবে। 

[৬] স্থানীয় কৃষক নুরুল ইসলাম হাওলাদার, জব্বার বয়াতী, হালিম শেখ, সাইদুর শেখ, রিপন ফকির সহ একাধিকরা বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সরকারী উদ্যোগে গ্রামীণ জনপদের এ অঞ্চলের প্রতিটি গ্রামেই রাস্তার পাশে, জমির সীমানায়, আনাচে কানাচে  ফাকা জায়গায় এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিৎ পর্যাপ্ত পরিমানে খেজুর ও তাল গাছের চারা  রোপণ করার।